সর্বশেষ

সোমবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৩

কুমিল্লা-০৬ সদরে ২ এমপির মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা

কুমিল্লা-০৬ সদরে ২ এমপির মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা

মোহাম্মদ শরিফুল আলম চৌধুরী, কুমিল্লা :  কুমিল্লা-০৬  সদর আসনে মনোনয়ন পত্রের বৈধতা পেয়েছেন দুই সংসদ সদস্য। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার এমপি ও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী আনজুম সুলতানা সীমা এমপি দুইজনের মনোনয়ন পত্র বৈধ ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান। 

জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী  এ আর আহমেদ সেলিম ও জাকের পার্টি মনোনীত প্রার্থী এডভোকেট মো. আবুল হোসেন মজুমদার সহ আরো একজনের মনোনয়ন বৈধ হয়েছে। মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে ১ জনের।

রোববার ও সোমবার (০৪ ডিসেম্বর) জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে দুই দিনব্যাপী জেলার ১১টি আসনের ১২১ জনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়।

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান জানান, কুমিল্লা-১ আসনে বাতিল করা হয়েছে ৬ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র,  বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে ৬ জনের।

কুমিল্লা-২ আসনে বাতিল হয়েছে ৬ জনের, বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে ৬ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র।

কুমিল্লা - ৩ আসনে বৈধ প্রার্থী ৬জন, বাতিল করা হয়েছে ৮ জনের মনোনয়নপত্র।

কুমিল্লা-৪ আসনে বৈধ প্রার্থী ১৩ জন, বাতিল করা হয়েছে একজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র।  

কুমিল্লা-৫ আসনে বৈধ ৬ জন, বাতিল করা হয় ৫ জনের।

কুমিল্লা- ৬ আসনে মনোনয়নপত্রের বৈধতা পেয়েছেন ৫ জন, বাতিল করা হয়েছে ১ জনকে।

কুমিল্লা-৭ আসনে মনোনয়নপত্রের বৈধতা পেয়েছে ৬ জন, বাতিল হয়েছে ৪ জনের। কুমিল্লা- ৮ আসনে মনোনয়নপত্রের বৈধতা পেয়েছে ১১ জন, বাতিল হয়েছে ৪ জনের।  

কুমিল্লা-৯ আসনে ৬ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে, ৩ জনের বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। কুমিল্লা-১০ আসনে ৩ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ করা হয়েছে, ৪ জনের বাতিল করা হয়েছে। কুমিল্লা- ১১ আসনে বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে ৫ জনকে, বাতিল করা হয়েছে ৬ জনের মনোনয়নপত্র।

শনিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৩

দেবীদ্বারের এমপি রাজী ফখরুলকে ইসির শোকজ

দেবীদ্বারের এমপি রাজী ফখরুলকে ইসির শোকজ

মোহাম্মদ শরিফুল আলম চৌধুরী, কুমিল্লা : নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী রাজী মোহাম্মদ ফখরুল এমপিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

শুক্রবার (১ লা ডিসেম্বর) কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার) আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির সভাপতি ও কুমিল্লা যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. ইমাম হাসান এ নোটিশ দিলেও শনিবার সন্ধ্যায় তা গণমাধ্যম কর্মীরা জানতে পারেন।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়, গত ৩০ নভেম্বর দেবীদ্বার সহকারী রিটার্নিং অফিসারের নিকট মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান রাজী ফখরুল এমপি। এ সময় তিনি বহু মানুষের সমন্বয়ে মোটর সাইকেল বহরসহ মিছিল নিয়ে অভ্যর্থনা গ্রহন করেন। বিষয়টি নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধির লঙ্ঘন। তার এমন আচরণ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে, যা নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির নজরে এসেছে। আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় আগামী ৩ ডিসেম্বর সকাল ১১ টায়, সংসদীয় আসন-২৫২, কুমিল্লা-৪ এর অস্থায়ী কার্যালয় কুমিল্লার যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ, ২য় আদালতে স্বশরীরে বা উপযুক্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে হাজির হয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয়া হলো।

এ বিষয়ে জানতে এমপি রাজী ফখরুলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তিনি কল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

বুধবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৩

 মালয়শিয়ায় দুর্ঘটনায় নিহতের দেবীদ্বার বাড়িতে শোকের মাতম

মালয়শিয়ায় দুর্ঘটনায় নিহতের দেবীদ্বার বাড়িতে শোকের মাতম

মোহাম্মদ শরিফুল আলম চৌধুরী, কুমিল্লা : মালয়েশিয়ায় ভবন ধ্বসে নিহত তিন বাংলাদেশি শ্রমিকের একজন কুমিল্লার দেবীদ্বারের সাইফুল ইসলাম। কুমিল্লার দেবীদ্বারের লক্ষীপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামে সাইফুলের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। আদরের ছোট ছেলের মর্মান্তিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না বাবা-মা। তাদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠছে বাড়ির পরিবেশ। সরকারের কাছে স্বজনদের একটাই চাওয়া, মরদেহ যেন দ্রুত দেশে আনার ব্যবস্থা করা হয়।

নিহতের আগেরদিন ক্যান্সার আক্রান্ত বাবার থেরাপির জন্য টাকা পাঠিয়েছিলেন সাইফুল। তার বাবা রোশন ভান্ডারী বলছিলেন, ‘আমি ক্যান্সারে ভুগছি অনেকদিন ধরে। সোমবার আমার থেরাপির জন্য ২০ হাজার টাকা পাঠিয়েছে আমার ছেলে, বুধবার আরও টাকা পাঠাবে জানিয়েছিল। এবার দেশে আসলেই বিয়ে করার কথা ছিল আমার ছেলের।’

গতকাল মঙ্গলবার রাতে মালয়েশিয়ার পেনাং রাজ্যে নির্মাণাধীন ভবন ধ্বসে দুই সহকর্মীসহ সাইফুল নিহত হন। তাছাড়া বেশ কয়েকজন আহত হন এবং চারজন ভবনের নিচে আটকা পড়েন। 

বুধবার সাইফুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার মা বিলাপ করে বলছেন, ‘আমার মানিক আমাদের সুখের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রবাসে শ্রমিকের চাকরি করছে, আমাদের কখনো তার কষ্ট বুঝতে দেয় নাই। আমার মানিকের মুখটা শেষবার দেখতাম চাই, তার লাশটা আপনেরা আইন্না দেন।’ 

ফতেহাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. কামরুজ্জামান মাসুদ বলেন, ‘সাইফুলের সহকর্মীরা তার মরদেহ দেশে পাঠাবার চেষ্টা করছে। আমিও যোগাযোগ রাখছি। মরদেহ আনার জন্য সরকার সংশ্লিষ্টদের সদয় দৃষ্টি কামনা করছি। আশা রাখছি, দ্রুত মরদেহ পাব।’

মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৩

স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষনা দেবীদ্বার উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের

স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষনা দেবীদ্বার উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের

মোহাম্মদ শরিফুল আলম চৌধুরী, কুমিল্লা : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার) আসনে নৌকা প্রতিকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র সংসদ হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষনা দিয়েছেন সদ্য পদত্যাগী উপজেলা চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদ। মঙ্গলবার দুপুরে দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে একটি মতবিনিময় সভা শেষে এই সিদ্ধান্তের কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন তিনি। এর আগে সোমবার উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন তাঁর নেতা-কর্মীরা।

মত বিনিয়ম সভা শেষে আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, মূলত আমি নৌকা বিপক্ষে প্রার্থী হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন ইচ্ছে করলে যেকেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। সে পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশে অনেক নেতাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগণ করার সিদ্ধান্ত  নিয়েছে। তাই কুমিল্লা-৪ ( দেবীদ্বার) আসনের  আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের অনুরোধে আমিও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

তিনি আরও বলে, সাধারণ মানুষ দেবীদ্বারে দু:শাসনের পরিবর্তন চায়। তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতারা আজ বঞ্চিত-লাঞ্চিত, অবহেলিত। যারা নিজেদের জায়গা-জমি বিক্রি করে দলের র্দুদিনে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন তাঁরা আজ আওয়ামী লীগের পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করছে। তারা নিজের দলীয় নেতাদের প্রতিহিংসার রাজনীতির শিকার হয়ে পদে পদে মামলা হামলার শিকার হচ্ছেন। আমি আশা করছি, প্রশাসন ও  তৃণমূলের হাজার হাজার নেতা-কর্মীর সহযোগিতায় আগামী ৭ জানুয়ারি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠিত হবে। 

স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি লুৎফুর রহমান বাবুল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. হুমায়ুন কবির চেয়ারম্যান, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক সুজিত পোদ্দার, গুনাইঘর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি মোকবল হোসেন মুকুল, ফতেহাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান মো. কামরুজ্জামান মাসুদ, জাফরগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাহিদুল আলম, সুবিল ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার মুকুল ভূঁইয়া, রসুলপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. শাহাজান সরকার প্রমুখ।  

স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র তোলায় উচ্ছ্বসিত কর্মী সমর্থকরা। আবুল কালাম আজাদকে জনবান্ধব ও কর্মীবান্ধব নেতা উল্লেখ করে সুবিল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার মুকুল বলেন, আবুল কালামের হাত ধরে আওয়ামী লীগ শক্তিশালী হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে তিনি একজন দক্ষ ও যোগ্য নেতা। আমরা আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাকে বিজয়ী করব ইনশাআল্লাহ।

সোমবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৩

কুমিল্লা ৫ আসন থেকে স্বতন্ত্র নির্বাচন করেছেন বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা শওকত মাহমুদ

কুমিল্লা ৫ আসন থেকে স্বতন্ত্র নির্বাচন করেছেন বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা শওকত মাহমুদ

মোহাম্মদ শরিফুল আলম চৌধুরী, কুমিল্লা : বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত শওকত মাহমুদ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র কিনেছেন। সোমবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে জেলা নির্বাচন অফিস থেকে  স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন শওকত মাহমুদ। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের  সভাপতি ছিলেন।এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির  সহসভাপতির দ্বায়িত্ব পালন সহ বিভিন্ন কর্মকান্ডে লিপ্ত ছিলেন। 

সাংবাদিককে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শওকত মাহমুদ নিজেই। তিনি বলেন, কুমিল্লা-৫ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন কিনেছি। পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে তা জমা দেব। নির্বাচন করার ইচ্ছে আছে। জমা দেওয়ার আরও দুদিন সময় আছে। পরিবেশ ভালো মনে হলে মনোনয়ন জমা দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে। চলতি বছরের ২১ মার্চ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদকে দলটির সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

কুমিল্লার দুই উপজেলায় পানিতে ডুবে তিন শিশুর মৃত্যু

কুমিল্লার দুই উপজেলায় পানিতে ডুবে তিন শিশুর মৃত্যু

মোহাম্মদ শরিফুল আলম চৌধুরী, কুমিল্লা : কুমিল্লার দুই উপজেলা ব্রাহ্মণপাড়া ও দাউদকান্দিতে পানিতে ডুবে তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে এই দুটি দুর্ঘটনা ঘটে।

ব্রাহ্মনপাড়া উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের বনানী এলাকার প্রবাসী শামসুল আলমের মেয়ে সিনথিয়া আক্তার (২) এবং একই এলাকার হাসান মিয়ার মেয়ে হাসিবা আক্তার (২) পুকুর পাড়ে খেলতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা যায়। তারা দুজনে আপন চাচাতো বোন

অপরদিকে আজ সোমবার দুপুরে দাউদকান্দি উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে বাড়ির পাশের ডোবার পানিতে পড়ে সাহিদুল হক (৪) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সে ওই এলাকার ওয়াছেক হকের ছেলে।

স্থানীয় সাংবাদিক মিজানুর রহমান ও মামুনুর রশিদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সোমবার বাড়ির পাশে পুকুরের পাড়ে খেলতে যায় সিনথিয়া ও হাসিবা। পরে পরিবারের লোকজন তাদের খোঁজাখুজি করে না পেয়ে বাড়ির উত্তর পাশে পুকুরে গিয়ে দেখেন সিনথিয়া ও হাসিবা পানিতে ভাসছে। স্বজনরা তাদের উদ্ধার করে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

দাউদকান্দি ও ব্রাহ্মনপাড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, এ বিষয়টি তাদের জানা নেই। তাছাড়া কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।

রবিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৩

কুমিল্লা ৯ প্রার্থী অপরিবর্তিত, নতুন মুখ সবুর ও শামীম

কুমিল্লা ৯ প্রার্থী অপরিবর্তিত, নতুন মুখ সবুর ও শামীম

নতুন মুখ 
মোহাম্মদ শরিফুল আলম চৌধুরী, কুমিল্লা :কুমিল্লায় ১১টির মধ্যে দুই আসনে নতুন মুখ এনেছে আওয়ামী লীগ। বাকি নয় আসনে পুরনোদের ওপরই আস্থা রেখেছে দলটি।

রোববার বিকাল ৪টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ২৯৮ আসনে চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

সেখানে কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি-তিতাস) আসনে টানা তিনবারের সংসদ সদস্য মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) সুবিদ আলী ভূঁইয়াকে বাদ দিয়ে নৌকার মাঝি করা হয়েছে ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুরকে।

আব্দুস সবুর টানা তিনবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি প্রকৌশলীদের শীর্ষ সংগঠন ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন, বাংলাদেশের (আইইবি) বর্তমান সভাপতি।

অন্যদিকে, কুমিল্লা-৮ (বরুড়া) আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও এসকিউ গ্রুপের চেয়ারম্যান এ জেড এম শফিউদ্দিন শামীমকে। তিনি সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংকেরও চেয়ারম্যান।

এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নাছিমুল আলম চৌধুরী নজরুলকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে দলীয় ফরম সংগ্রহ করে দেশব্যাপী আলোচনায় ছিল কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) সংসদীয় আসন।

এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন ২৯ জন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এখানে বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল হাসেম খানের ওপরই আস্থা রেখেছে আওয়ামী লীগ। 

কুমিল্লা থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া অন্যান্য আসনে প্রার্থীরা হলেন- কুমিল্লা-২ (হোমনা-মেঘনা) সেলিমা আহমেদ মেরি, কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার) রাজী মুহম্মদ ফখরুল, কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া ) আবুল হাশেম খান, কুমিল্লা-৬ (সদর) আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার, কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) প্রাণ গোপাল দত্ত,  কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) মো. তাজুল ইসলাম, কুমিল্লা-১০ (সদর দক্ষিণ-নাঙ্গলকোট-লালমাই) আ হ ম মুস্তফা কামাল ও কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) মুজিবুল হক মুজিব।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। কুমিল্লার ১১টি আসন থেকে মোট ১০৪ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে দলীয় ফরম জমা দিয়েছিলেন।

শনিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৩

যারা পেতে যাচ্ছেন আ.লীগের মনোনয়ন

যারা পেতে যাচ্ছেন আ.লীগের মনোনয়ন

মোহাম্মদ শরিফুল আলম চৌধুরী : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা প্রায় চূড়ান্ত। সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের ধারাবাহিক সভার মাধ্যমে আট বিভাগে দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়েছে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি—তা শুধু ঘোষণার অপেক্ষামাত্র।

সারা দেশে ৩০০ সংসদীয় আসনে নতুন মুখ যেমন এসেছেন, তেমনি বাদও পড়েছেন পুরোনো বিতর্কিত ও বয়সের ভারে ন্যুব্জরা। জনগণের ভোটে বিজয়ী হতে পারবেন—এমন প্রার্থী কাউকেই বাদ দেওয়া হয়নি। একাদশ জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনে হাতেগোনা কিছু ছাড়া বেশিরভাগ প্রার্থীই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার থেকে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে মনোনয়ন বোর্ডের সভা শুরু হয়। গত তিন দিনে আটটি বিভাগের প্রার্থীর চূড়ান্ত তালিকা প্রায় সম্পন্ন। প্রথম দিন রংপুর ও রাজশাহী, পরদিন শুক্রবার খুলনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও ঢাকার কিছু অংশের প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন হয়। গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করে ক্ষমতাসীন দলটি।

দলের সভাপতি শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ সেলিমসহ অনেক হাইপ্রোফাইল নেতা রয়েছেন, যাদের আসনে মনোনয়ন পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই।

রাজশাহী বিভাগে বর্তমান সংসদ সদস্যদের অনেকে বাদ পড়লেও পঞ্চগড়-২ থেকে নূরুল ইসলাম সুজন, ঠাকুরগাঁও-১ রমেশ চন্দ্র সেনের মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন সংসদীয় বোর্ডের সদস্য। দিনাজপুরে বর্তমান সংসদ সদস্যদের সবাই মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন। দিনাজপুর-১ মনোরঞ্জন শীল গোপাল, দিনাজপুর-২ খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দিনাজপুর-৩ ইকবালুর রহিম, দিনাজপুর-৪ আবুল হাসান মাহমুদ আলী, দিনাজপুর-৫ মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, দিনাজপুর-৬ আসনে শিবলী সাদিক মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন।

আরও যারা মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন তারা হলেন নীলফামারী-২ আসাদুজ্জামান নূর, রংপুর-৪ বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী, রংপুর-৫ থেকে আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ বর্তমান এমপি এইচ এন আশিকুর রহমানের ছেলে রাশেক রহমান, রংপুর-৬ ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, গাইবান্ধা-২ মাহবুব আরা বেগম গিনি, জয়পুরহাট-২ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, বগুড়া-৬ রাগেবুল আহসান রিপু, নওগাঁ-১ সাধন চন্দ্র মজুমদার, রাজশাহী-৪ আবুল কালাম আজাদ, রাজশাহী-৫ আব্দুল ওয়াদুদ দারা, রাজশাহী-৬ শাহরিয়ার আলম, নাটোর-২ শফিকুল ইসলাম শিমুল, নাটোর-৩ জুনাইদ আহমেদ পলক, সিরাজগঞ্জ-১ তানভীর শাকিল জয়, সিরাজগঞ্জ-২ জান্নাত আরা হেনরী, পাবনা-১ শামসুল হক টুকু, মেহেরপুর-১ ফরহাদ হোসেন, যশোর-৪ রঞ্জিত কুমার রায়, যশোর-৫ স্বপন ভট্টাচার্য, যশোর-৬ শাহীন চাকলাদার, কুড়িগ্রাম-১ রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, লালমনিরহাট-২ নূরুজ্জামান আহমেদ, কুষ্টিয়া-৩ মাহবুবউল-আলম হানিফ, নড়াইল-২ মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা, বাগেরহাট-১ শেখ হেলাল উদ্দিন, বাগেরহাট-২ শেখ তন্ময়, বাগেরহাট-৩ হাবিবুন নাহার, বাগেরহাট-৪ আমিরুল আলম মিলন, খুলনা-১ ননী গোপাল মণ্ডল, খুলনা-২ শেখ সালাউদ্দিন, পটুয়াখালী-১ আফজাল হোসেন, ভোলা-১ তোফায়েল আহমেদ, বরিশাল-১ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, পিরোজপুর-১ শ ম রেজাউল করিম, পিরোজপুর-৩ আশরাফুর রহমান, ঝালকাঠি-২ আমির হোসেন আমু, বরিশাল-২ তালুকদার মো. ইউনুস, বরিশাল-৩ এস এম খালেদ হোসেন, বরিশাল-৪ শাম্মী আহমেদ, বরিশাল-৫ জাহিদ ফারুক শামীম, বরিশাল-৬ আবদুল হাফিজ মল্লিক, ঝালকাঠি-১ বজলুল হক হারুন, পটুয়াখালী-২ আবু সাদত মো. ফিরোজ, পটুয়াখালী-৩ এস এম শাহজাদা, পটুয়াখালী-৪ মাহবুবুর রহমান তালুকদার, পিরোজপুর-২ কানাই লাল বিশ্বাস, বরগুনা-১ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, বরগুনা-২ সুলতানা নাদিরা জলি, ভোলা-২ আলী আজম মুকুল, ভোলা-৩ নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, ভোলা-৪ আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, মুন্সীগঞ্জ-৩ মৃনাল কান্তি দাস, ঢাকা-১ সালমান এফ রহমান, ঢাকা-৩ নসরুল হামিদ, ঢাকা-৯ সাবের হোসেন চৌধুরী, ঢাকা-১১ এ কে এম রহমত উল্লাহ, সিলেট-১ এ কে আব্দুল মোমেন, টাঙ্গাইল-১ আব্দুর রাজ্জাক, জামালপুর-৩ মির্জা আজম, শেরপুর-২ মতিয়া চৌধুরী, ময়মনসিংহ-৯ মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম, ময়মনসিংহ-১০ ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল। নেত্রকোনার পাঁচটি আসনের মধ্যে দুটিতে প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। নেত্রকোনা-৫ থেকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, নেত্রকোনা-১ আসনে মোস্তাক আহমেদ রুহী, নেত্রকোনা-২ আসনে সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু, নেত্রকোনা-৩ আসনে অসীম কুমার উকিল ও নেত্রকোনা-৪ থেকে সাজ্জাদুল হাসান মনোনয়নে পেতে যাচ্ছেন। মৌলভীবাজার-১ থেকে সাহাব উদ্দিন, মৌলভীবাজার-২ থেকে শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন।

চট্টগ্রাম-১ আসনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ছেলে এবং উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাহবুবুর রহমান রুহেল, চট্টগ্রাম-২ আসনে প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ারের সন্তান সংরক্ষিত আসনের এমপি খাদিজাতুল আনোয়ার সনি, চট্টগ্রাম-৩ আসনে মাহফুজুর রহমান মিতা, চট্টগ্রাম-৪ আসনে সাবেক এমপি আবুল কাশেম মাস্টারের ছেলে ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এম এম আল মামুন, চট্টগ্রাম-৫ আসনে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুস সালাম, চট্টগ্রাম-৮ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৯ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১০ আসনে মহিউদ্দিন বাচ্চু, চট্টগ্রাম-১১ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফ, চট্টগ্রাম-১২ আসনে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পটিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৪ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৫ আসনে আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী ও চট্টগ্রাম-১৬ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী নৌকার মনোনয়ন পাচ্ছেন।

কক্সবাজার-১ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ সিআইপি, কক্সবাজার-৪ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য এবং সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির স্ত্রী শাহিন আক্তার চৌধুরী, কুমিল্লা-১ আসনে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আব্দুস সবুর এবং খাগড়াছড়িতে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা নৌকার মনোনয়ন পাচ্ছেন।

শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৩

২৮ অক্টোবরের রোজনামচা !

২৮ অক্টোবরের রোজনামচা !

গোলাম মাওলা রনি

অনেক বাঙালির মতো আমারও ভুলে যাওয়ার অভ্যাস খুব বেশি। আর এই অভ্যাস কেনই বা হবে না- কারণ বাঙালির প্রাত্যহিক জীবনচক্রে প্রকৃতি ও প্রাণীর আচরণে এত ভিন্নতা যা মহাবিশ্বের অন্য কোথাও নেই। নিরিবিলিতে সময় কাটানোর জন্য অথবা টিএস ইলিয়টের মতো একখানি কবিতা রচনার ভাব যদি আপনাকে পেয়ে বসে তবে নিশ্চয়ই আপনি কোনো বাঙালি নদীর তীরে বিশালকায় বটবৃক্ষ দেখলে সেখানে বসে কিছু একটা করার চিন্তায় বিভোর হওয়ার চেষ্টা করবেন। তারপর লক্ষ করবেন, গোটা দশেক মাছি এসে আপনাকে গান শোনানোর জন্য অস্থিরতা দেখাচ্ছে। মাছিদের দেখাদেখি এক ঝাঁক মশাও চলে আসবে আমন্ত্রিত অতিথির মতো। এরই মধ্যে দেখবেন কয়েকটি জোঁক আপনার পদপ্রান্তে এমন চুম্বন বসিয়েছে যার শিহরণে আপনার শরীরের বিশেষ অঙ্গগুলোতে এক ধরনের ঝাঁকুনি শুরু হয়ে গেছে।

উল্লিখিত অবস্থায় আপনি ধৈর্য না হারিয়ে আবার কাব্য প্রতিভার অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার চেষ্টা যখন নতুন উদ্যমে শুরু করেছেন, ঠিক তখন কোত্থেকে যেন সাত-আটটি নেড়ি কুত্তা আপনার আগমনে অতিশয় আনন্দ প্রকাশ করার জন্য- আপনাকে ঘিরে এমন ঘেউ ঘেউ শুরু করল- যার কারণে মশা-মাছি-জোঁকের যন্ত্রণা আপনি বেমালুম ভুলে গেলেন। কবিতার ভূত মাথা থেকে বটগাছের ডালে উঠল এবং আপনি যখন ভালো করে চারদিকে তাকালেন তখন লক্ষ করলেন, দুষ্টু কিছু পাখি তাদের বাহারি বিষ্ঠা দিয়ে আপনার পরিচ্ছদ ও মস্তিষ্কের ঊর্ধ্বাংশ রঞ্জিত করে দিয়েছে। আপনাকে স্বাগত জানানোর জন্য কোত্থেকে যেন এক দঙ্গল পোলাপান চলে এসেছে এবং তারা আপনার হালহকিকত দেখে এমন খুনসুটি শুরু করল যে, কুকুরের নাচন-কুদন-পাখির মলত্যাগ আপনি ভুলে যেতে বাধ্য হলেন এবং বাংলাদেশে কেন নিউটন পয়দা হয়নি সেই মহাসত্যটি আবিষ্কার করে আপনার আলয়ে ফেরার পথে আরো অনেক ঘটনার তাণ্ডবে বাঙালি নদীর তীরে বটবৃক্ষের তলে যা কিছু ঘটেছে তা ভুলে গেলেন।

বাঙালির প্রাত্যহিক জীবনের হাজারো সমস্যা হাজারো সম্ভাবনা হাসি-আনন্দ-বেদনা সুনামি-কালবৈশেখী অথবা মরুঝড় সাইমুমের মতো এতটা প্রবল বেগে আঘাত হানে যার কারণে আত্মভোলা, ভুলে যাওয়া অথবা স্মরণে না থাকার মতো মনস্তাত্ত্বিক রসায়নে আমি যেন ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের ২৮ তারিখটি ভুলে না যাই সে জন্য দিনটিতে কী ঘটেছিল তার কিছু চাক্ষুষ বর্ণনা আপনাদের কাছে পেশ করার চেষ্টা করব। ২৮ অক্টোবরের পূর্ববর্তী দিন এবং পরবর্তী দিনের ঘটনা ও অনুঘটনাকে কেন্দ্র করেই বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতি-অর্থনীতি-সামাজিক এবং পারিবারিক সম্পর্ক আবর্তিত হচ্ছে। ২৮ অক্টোবরের ওপর ভিত্তি করে যে ইতিহাসের সৃষ্টি হয়েছে তার রেশ আগামী ২৫ বছর পর্যন্ত চলতে থাকবে এবং দিনটির প্রভাবে আমরা যে দুঃখ-দুর্দশার মায়াবী জালে আটকা পড়েছি তা থেকে বের হতে কয়েক যুগ সময়ের প্রয়োজন হবে। ফলে গত ৫০ বছরের ইতিহাসে যেসব দিনকে আমরা স্মরণ করতে বাধ্য হই সেগুলোর সাথে ২৮ অক্টোবর নতুন করে কেন যুক্ত হলো তার কার্যকারণও আপনাদের বলব।

আলোচনার শুরুতে ২৮ অক্টোবর সম্পর্কে একটি সূচনা বক্তব্য দেয়া আবশ্যক। দিনটিকে আমার কাছে ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরের ঘটনা অথবা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের রাতের ঘটনার মতো সুদূরপ্রসারী বলেই মনে হচ্ছে। অর্থাৎ ২৮ অক্টোবরের কারণে আমাদের জীবনে বিদেশী প্রভাব অপরিহার্য হয়ে পড়তে পারে অথবা আমরা গণতন্ত্রের বিজয়ের মহীসোপানের বাসিন্দা হয়ে যেতে পারি। বাংলাদেশ সম্পর্কে পশ্চিমা দুনিয়া-দিল্লি ও চীনের যে অতি আগ্রহ হালআমলে দেখতে পাচ্ছেন ঠিক তদ্রুপ আগ্রহের কারণে ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। অন্য দিকে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিনের বেলায় যা কিছু ঘটেছে তা দেখে কেউ কল্পনাও করতে পারেনি যে, ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস হতে চলেছে।


অতীতের নানামুখী তৎপরতা এবং অপতৎপরতায় মানুষ যখন মজলুম হয়ে পড়েছে এবং বাতাসে বারুদের গন্ধ ছড়িয়ে হাতকে দুর্বল করে হাতিয়ারকে মারণাস্ত্র বানানো হয়েছে তখন পৃথিবীর ঘটনাপঞ্জি উল্টে দেয়ার জন্য নিয়তির খেলা শুরু হয়েছে। মানুষের জবান যখন বোবা প্রাণীর মতো হয়েছে কিংবা ময়না-টিয়া-শালিকের মতো হয়ে গেছে তখনো প্রকৃতি নিদারুণ খেলা খেলেছে। মানুষের দৃষ্টিতে যা ধরা পড়েছে তার সাথে যখন প্রকৃত ঘটনার মিল ছিল না, তখন প্রকৃতি তার আপন মহিমাতে জমিনে এমন ভেলকিবাজি দেখিয়েছে যা রক্তমাংসের ভেলকিবাজরা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেনি। সুতরাং ২৮ অক্টোবর নিয়ে অনাগত দিনে নতুন ইতিহাস সৃষ্টির আগেই সেদিনের রোজনামচা বর্ণনা করা আবশ্যক।

ঘটনার দিন খুব সকালে আমি অফিসে আসি। আমার অফিসের অবস্থান বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অফিসের ঠিক মাঝামাঝি স্থান, তোপখানা রোড। ঘটনার দিনের উত্তেজনায় আমি ছিলাম অস্থির। খাওয়া-দাওয়া কাজকর্ম ফেলে কম্পিউটারে বসে ঘটনাপ্রবাহ দেখছিলাম। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমের শত শত সরাসরি অনুষ্ঠান বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে এমনভাবে প্রচার হচ্ছিল যার কারণে আমার কম্পিউটারের ১৬ ইঞ্চি পর্দার মধ্যে পুরো ঢাকা মহানগরসহ দিল্লি ওয়াশিংটনের বাংলাদেশবিষয়ক প্রতিক্রিয়া দিবালোকের মতো দৃশ্যমান হচ্ছিল। দুপুর ১২টা নাগাদ শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবন ও সেখান থেকে কাকরাইল মসজিদ হয়ে নয়াপল্টন এবং তারপর ফকিরের পুল-আরামবাগ ও গোপীবাগ পর্যন্ত সব অলিগলি ছিল লোকে লোকারণ্য।

আওয়ামী লীগের সমাবেশ উপলক্ষে কার্জন হল থেকে উসমানী উদ্যান-তারপর জিরো পয়েন্ট থেকে ভাসানী স্টেডিয়াম ছিল রীতিমতো জনারণ্য। সবার মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও নির্ভার নির্ভীক একটি ভাব থাকার কারণে আমজনতা ধরে নিয়েছিল যে, সন্ধ্যার আগেই বিএনপি-আওয়ামী লীগের সমাবেশ অতীতের মতো শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হবে। ২৮ অক্টোবরে পুলিশি অ্যাকশনের আগে ছোট্ট দুটো ঘটনা ঘটেছিল যার কার্যকারণ খুঁজে পাওয়া যায়। প্রথমটি ঘটে কাকরাইল মসজিদের সামনে। সেখানে বিএনপি-আওয়ামী লীগ কর্মীদের মধ্যে মারধর-ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয় এবং পুলিশের মধ্যস্থতায় ১০ মিনিটের মধ্যে দফারফা হয়ে যায়। দ্বিতীয় ঘটনা ঘটে আওয়ামী লীগের সভামঞ্চে। কে বা কারা গুজব রটায় যে, বিএনপি নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের জনসভার দিকে লাঠিসোটা নিয়ে ধেয়ে আসছে।

উল্লিখিত গুজবে আওয়ামী লীগের জনসভায় চিত্তচাঞ্চল্য দেখা দেয়। হাজার হাজার নেতাকর্মী দিগিবেদিক দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। নেতারা মঞ্চ থেকে উপর্যুপরি ঘোষণা দিতে থাকেন যে, কেউ গুজবে কান দেবেন না। বিএনপির কেউ আসছে না, ভয় পাবেন না ইত্যাদি। ফলে ঘণ্টা খানেকের মধ্যে অস্থিরতা ভয়-আতঙ্ক-দৌড়াদৌড়ি বন্ধ হয় এবং জোহরের আজান ও মধ্যাহ্নভোজনের সময়ে পুরো পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণভাবে এগোতে থাকে। এমতাবস্থায় লোকজন বলাবলি শুরু করে- কোন সমাবেশে কত লোক এসেছে, পরবর্তী কর্মসূচি কী হতে পারে ইত্যাদি। সমাবেশস্থলের খাবার হোটেল, পান-বিড়ি-চায়ের দোকানে উৎসবের আমেজ এবং কোথাও ভয়-ভীতি-আতঙ্কের চিহ্নমাত্র ছিল না। কিন্তু হঠাৎ প্রধান বিচারপতির বাসভবনকে কেন্দ্র করে এমন কিছু ঘটল যার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের মাত্র ৩৫ মিনিটের নজিরবিহীন অ্যাকশনে বিএনপির সমাবেশে যে বিভীষিকা নেমে এলো তা নিয়ে দেশ-বিদেশে বিতর্কের শেষ নেই। আমি আজকের নিবন্ধে সেসব বিতর্ক নিয়ে আলোচনা না করে বরং বিএনপির একটি শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক সমাবেশ পণ্ড হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে যে ভয়াবহ পরিণতির দিকে আমরা পুরো জাতি ধেয়ে চলেছি তা নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করব।

২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশটি পুলিশি অ্যাকশনে পণ্ড এবং ২৯ তারিখ দিনে ও রাতে সারা দেশে পুলিশি তৎপরতার কারণে বাংলাদেশ যে সন্ধিক্ষণে পৌঁছে গেছে সেখান থেকে পরিণতি ভোগ না করে কোনো পক্ষেরই ঘরে ফেরা সম্ভব নয়। সেদিনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দেশ-কাল-সমাজে নিম্নরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

১. পুরো দেশের মানুষের বিভেদ-বিসংবাদ, পারস্পরিক ঘৃণা-ক্রোধ ও একদল অন্য দলকে নির্মূল করার জন্য যেভাবে বদ্ধপরিকর হয়ে মাঠে মহড়া দিচ্ছে তা অতীতে কোনো দিন দেখা যায়নি।

২. তিক্ত ও উত্তপ্ত সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে মন্দ মানুষগুলো সম্মুখসারিতে চলে এসেছে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য এবং ভালো মানুষগুলো নেপথ্যে চলে গেছে। ফলে অস্থিরতা প্রকাশিত হলে সর্বস্তরে যে শূন্যতা সৃষ্টি হবে তা পূর্ণ করার জন্য যোগ্য লোক পাওয়া যাবে না। এ অবস্থায় অনাগত দিনে দুর্ভোগ-দুর্দশা-অনাচার-অবিচার-দুর্নীতি-দরিদ্রতাসহ অসভ্যতার সব উপকরণ আমাদের অক্টোপাসের মতো আঁকড়ে ধরবে।

৩. আমাদের দেশে বিদেশীদের আধিপত্য বাড়বে। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ কিংবা নেপালের চেয়েও আমাদের রাজনীতি জটিল আকার ধারণ করবে এবং বিদেশী শক্তির চরিত্র ও মেজাজমর্জি অনুযায়ী আমাদের সামাজিক-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিবর্তন ঘটবে।

৪. আমাদের আর্থিক ব্যবস্থা মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে এবং জনজীবনে অস্থিরতা, নিরাপত্তাহীনতা ও অসম্মানের বোঝা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে যাবে।

৫. গণতন্ত্র শাসনতন্ত্র রাজনীতি ইত্যাদির নতুন সংজ্ঞা রচিত হবে এবং রাজনীতির ময়দানের দুটো বৃহৎ শক্তির মধ্যে একটির পতন এমনভাবে হবে যে, আগামী ২৫ বছরের মধ্যে তাদের নামটি উচ্চারণের মতো লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে শূন্যতার সৃষ্টি হবে তা পূর্ণ করার মতো ক্ষমতা এই জমিনের কোনো মানুষের হাতে থাকবে না।

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য


বুধবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৩

ভারতের দালাল!

ভারতের দালাল!

রীতা রায় মিঠু, যুক্তরাষ্ট্র থেকে : অনেক দিন পর আজ দুপুরে খাওয়ার জন্য উত্তমকে ম্যাকডোনাল্ডসে পাঠিয়ে ২$ দামের চিকেন বার্গার আর আলুভাজা কিনিয়ে আনলাম। বোনাস হিসেবে উত্তম চিকেন নাগেটসও এনেছে।

আমেরিকায় আসার পর ঘরের বাইরে খাওয়া বলতে আমাদের কাছে ম্যাকডোনাল্ডের ১$ দামের চিকেন বার্গার আর ছোটো এক প্যাকেট আলু ভাজা ছিলো রাজভোগ খাওয়ার মতো ব্যাপার!

মৌটুসি মিশাকে নিয়ে স্টেট লেভেল সোশাল স্টাডিজ ফেয়ার, সায়েন্স ফেয়ার, প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা, বক্তৃতা প্রতিযোগিতা এটেন্ড করতে দূরে কোথাও যেতাম, পথিমধ্যে খুব মজা করে ডলার মেন্যু ম্যাগডোনাল্ডস চিকেন বার্গার আর আলু ভাজা খেতাম। 

মৌটুসি মিশার ফার্স্ট প্রাইজ ট্রফি পাওয়া উপলক্ষে বাড়ি ফেরার পথে ম্যাক চিকেনের সাথে বোনাস থাকতো চিকেন নাগেট আর অ্যাপেল পাই!

আমরা তখনও সুযোগ পেলেই বেড়াতাম। আমি তো এমনিতেই খুব হিসেবী ছিলাম, আমার মিশা কন্যা ছিলো আমার সহকারী। 

ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে খাবার ব ছোটো বেলা থেকেই মিশা দক্ষ ছিলো।

দুই দিনের ছুটিতে কোথাও বেড়াতে গেলাম,  বাজেট নির্ভর সস্তার হোটেলে ডাবল বেড একটা রুম নিয়ে আমার ভাইসহ ছয় জন থাকতাম। 

আমার ভাই আর আমার উত্তম ঘুমাতো এক বেডে, আমরা মা আর তিন কন্যা ঘুমাতাম আরেক বেডে।

মৌটুসি আর ছোট্টো মিথীলাকে টান টান করে শোয়ার ব্যবস্থা করে আমি মিথীলার পাশে শরীরটা বাঁকা করে শুয়ে দিব্যি ঘুম দিতাম, আর মিশা আমাদের পায়ের নীচে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে ঘুম দিতো।

এই যে দুই পয়সার বিনিময়ে সস্তার হোটেলে থাকা, সস্তার ম্যাকডোনাল্ড বার্গার খাওয়া, এক বেডে চারজন গুটিশুটি করে ঘুমানো---এই নিয়ে কারো মনে কোনো ক্ষোভ ছিলো না, কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো না।

আমরা সকলেই খুব খুশি থাকতাম নিজেদের আনন্দ নিয়ে, কৃতজ্ঞ থাকতাম গরীবের ম্যাকডোনাল্ডস আর 'ডেইজ ইন, বাজেট ইন' নামের হোটেল ম্যানেজমেন্টের প্রতি। [ ইন্ডিয়ান মালিক বলেই হয়তো ডাবল বেড রুমে ছয় জন থাকা নিয়ে কখনো আপত্তি করতো না। কারণ তারাও এইভাবেই কষ্ট করেই আমেরিকার মতো দেশে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে]

২২ বছর পেরিয়ে গেছে আমরা আমেরিকায় আছি। আমাদের তিন কন্যা এখন নিজেদের পয়সায় ইউরোপ আমেরিকা বেড়ায়, নামী দামী হোটেলে থাকে, ১ ডলারের ম্যাক চিকেন খাওয়ার  পরিবর্তে ১০০ ডলার খরচ করে হয়তো এক প্লেট অক্টোপাস শামুক ঝিনুক ক্রোকোডাইল ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক রকমের অখাদ্য কুখাদ্য টেস্ট করে দেখে কেমন খেতে!

ছুটিছাটায় যখন আমরা একত্রিত হই, আমরা আমেরিকায় আমাদের প্রথম জীবনের কথা স্মৃতিচারণ করে সুখ অনুভব করি। আমরা এখনও কোথাও বেড়াতে গেলে যে কোনো একবেলা ম্যাকডোনাল্ডসের সামনে গাড়ি থামিয়ে আগের মতো $ মেন্যু দেখে চিকেন বার্গার আর আলুভাজা কিনি।

একই রকম স্বাদ, একই রকম অনুভূতি, একই রকম সুখ অনুভব করি।

রাস্তার পাশে বাজেট ইন, ডেইজ ইন হোটেলের সাইনবোর্ড দেখলেই মা মেয়েরা আনন্দে চিৎকার দিয়ে উঠি, মনে পড়ে যায় এই নামগুলোর সাথে আমাদের কত হৃদ্যতা, কত সুখের স্মৃতি।

এই কথাগুলো লিখার কারণ একটাই, ফেসবুকে অনেকেই আমাকে ভারতের দালাল বলে, কেউ আমাকে চাড্ডি ডাকে[ চাড্ডির মানে আমি জানি না, হয়তো খুব অশ্লীল মানে], কেউ ডাকে বিজেপির চেলা, মোদির বইন, মোদির কন্যা!

শেখ হাসিনার চামচা, শেখ হাসিনা আমার বুবু, এই কথাগুলো বলে আজকাল আর কেউ খোঁটা দেয় না। 

হ্যাঁ,  ভারত আমার খুব প্রিয়। ভারত আমার কাছে অন্য আর পাঁচ দশটা দেশের মতো নয়। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি,  বাংলাদেশের পরে একমাত্র যে দেশটিকে আমার খুব আপন মনে হয়, সেটা ভারত।

কারণ এই ভারতেই আছে আমার বাবার বাড়ি, মায়ের বাড়ি, শ্বশুর বাড়ির আত্মীয় স্বজন। কেন ওরা ভারতে, আমি বাংলাদেশে--- তার ইতিহাস অনেক পুরানো। সেসব নিয়ে মাথা ঘামিয়ে বুকে রক্তক্ষরণ করতে চাই না।

এই ভারতেই প্রথম গেছিলাম ১৯৭০ সালে, এক মাস থেকে মায়ের সাথে বেড়িয়েছি চিড়িয়াখানা যাদুঘর গড়ের মাঠ দক্ষিণেশ্বর মন্দির শোভাবাজার, ইলেকট্রিক ট্রেন চড়েছি। আমার বয়স তখন ছয়ের কাছাকাছি। অই শিশু বয়সে দেখা এত সুন্দর সুন্দর স্থান, মনে দাগ কেটে গেছে।

এরপর ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী আর্মির চোখ এড়িয়ে আমরা পৌঁছেছি আবারও ভারতেই। রিফিউজি হলেও নয় মাস নিশ্চিন্ত ছিলাম, কাঁকড় মেশানো চালের ভাত খেয়েছি, বাজে আটার রুটি খেয়েছি তবুও খুশি ছিলাম কেউ আমাদের গুলি করে মারতে পারবে না! 

শিশু বয়সে প্রাণে বেঁচে থাকার অর্থ বুঝতে না পারলেও গুলি খাওয়ার ভয় নেই, বোমায় মরে যাওয়ার ভয় নেই, বাবা মায়ের চোখেমুখে আতংক নেই-- এর যে কী অনুভূতি এটা বুঝতে পারবে বাংলাদেশে আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গা শিশুরা।

রোহিঙ্গা শিশুদের মনে বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা বোধ, ভালোবাসা তৈরি হবে কিনা জানি না, কিন্ত আমার ভেতর সেই ছোটোবেলা থেকেই তৈরি হয়েছে ভারতের প্রতি ভালোবাসা, অন্তরের টান।

ম্যাকডোনাল্ডস আর ডেইজ ইনের সাথে আমার কন্যাদের যে মধুর স্মৃতি জড়িয়ে আছে, যত বড়ো বড়ো হোটেল রেস্টুরেন্টেই ওরা এখন যাক না কেন, ছোটোবেলার ম্যাকডোনাল্ডস আর হোটেল বাজেট ইনের প্রতি কৃতজ্ঞতা থেকে যাবে।

ঠিক ভারতের প্রতি আমার, আমার মতো আরও অনেকের যে কৃতজ্ঞতা বোধ, ভালোবাসার সম্পর্ক আজও রয়ে গেছে, নিমক-হারাম না হলে এই ভালোবাসা কৃতজ্ঞতা বোধ আজীবন থাকবে।

[পুনশ্চঃ জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। ২০ বছর আগের ১$ দামের চিকেন বার্গারের দাম এখন ২.৫০$]